মহাস্থানগড়। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো এক নগরজীবনের ইতিহাসে। এখানকার প্রতিটি প্রাচীর, মাটি, মূর্তি আর ইট যেন বয়ে বেড়াচ্ছে এক জীবন্ত ইতিহাস।
প্রাচীন বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে কাছে থেকে স্পর্শ করতে ঘুরে আসতে পারেন এ ঐতিহ্যবাহী স্থান থেকে।
বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান মহাস্থানগড়। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে গড়ে ওঠা প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন নগরীর অবশেষ। এখানকার দুর্গ, টেরাকোটা শিল্প, ব্রাহ্মী লিপির শিলালিপি এবং প্রাচীন মন্দির ভ্রমণকারীদের ইতিহাসের গহ্বরে নিয়ে যায়। মহাস্থানগড় শুধু ভ্রমণ নয়, এটি এক শিক্ষা, এক ঐতিহাসিক যাত্রা।
মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে এবং বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মহাসড়ক ধরে ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত এসি ও নন-এসি বাসে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন সেখানে। বগুড়া শহর থেকে রিকশা, সিএনজি বা লোকাল বাসে সহজেই মহাস্থানগড় পৌঁছানো সম্ভব।
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং পরবর্তীতে গুপ্ত, পাল ও সেন রাজবংশের শাসনাধীন ছিল। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়। এখানে পাওয়া যায় ব্রাহ্মী লিপি খচিত শিলালিপি, বিভিন্ন প্রাচীন মুদ্রা, পোড়ামাটির ভাস্কর্য এবং বহু প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। এগুলো থেকে বোঝা যায়, মহাস্থানগড় ছিল এক উন্নত ও পূর্ণাঙ্গ নগর ব্যবস্থা।
মহাস্থানগড় এলাকায় অবস্থিত একটি পবিত্র স্থান “জন্মস্থান ঘর” নামে পরিচিত। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। ধারণা করা হয় এটি শ্রীকৃষ্ণের কোনও ভক্তের জন্মস্থান ছিল। এখানে প্রতিদিন পূজা-অর্চনা হয় এবং প্রতি বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তীর্থযাত্রা করেন। স্থানটির আশেপাশে রয়েছে ছায়া ঘেরা পরিবেশ ও শান্ত মনোরম প্রকৃতি।
মহাস্থানগড় ভ্রমণ করলে যে স্থানগুলোর দেখা মিলবে এবার আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব-
গোকুল মেধ (বেহুলার বাসর ঘর): এটি একটি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন, যা পাল যুগে নির্মিত হয়েছে। এটি একটি বৌদ্ধ স্তূপ বলে ধারণা করা হয়।
গোবিন্দ ভিটা: প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, যেখানে শ্রীগোবিন্দ দেবের পূজা হতো।
খোদার পাথর ভিটা: এখানে পাওয়া গেছে প্রাচীন টেরাকোটা শিল্পকর্ম এবং একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ।
বাইবেল হিল: এটি একটি উঁচু স্থান, যেখান থেকে পুরো মহাস্থানগড় দেখা যায়।
জিয়ুত কুণ্ড: এটি একটি পবিত্র কুণ্ড বা কুয়া, যেখানে তীর্থযাত্রীরা পবিত্র স্নান করেন।
ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর কিংবা সায়েদাবাদ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়ে। যেমন: এস আর, হানিফ, শ্যামলী, আগমনী, গ্রিন লাইন ইত্যাদি। বাসে ঢাকা থেকে বগুড়া যেতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে মহাস্থানগড় পৌঁছানো যায়। চাইলে ট্রেনেও যাওয়া যায়, সান্তাহার স্টেশনে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়।
থাকার জন্য বগুড়া শহরে বিভিন্ন মানসম্মত হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে:
হোটেল মমইন: আধুনিক সুবিধা ও পরিবার নিয়ে থাকার জন্য আদর্শ।
নাজ গার্ডেন হোটেল: শহরের অন্যতম সেরা হোটেল, যেখানে উচ্চ মানের রুম ও খাবার পাওয়া যায়।
পার্ক মোটেল: সরকারি পর্যটন মোটেল, যারা বাজেট রেঞ্জে ভালো থাকা চান তাদের জন্য উপযুক্ত।
আর একটি বিষয় মনে রাখবেন, ভ্রমণে বগুড়ার বিখ্যাত দই অবশ্যই খেতে ভুলবেন না।
ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় সবচেয়ে উপযুক্ত। এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক ও মনোরম থাকে। তাই এ সময়টাতে ঘুরে আসতে পারেন।
আরও খবর
১৮০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের বিস্ময় ‘ভরত রাজার দেউল’
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=ihmsi3Kt8P0[/embed] ব্যস্ত নগরজীবনে কাজকর্মের চাপে যখন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই কোনো দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন। একঘেয়েমি দূর হওয়ার...
যে সাগরে মানুষ ডোবেনা | ঘুরে আসুন ডেড সি বা মৃত সাগর (ভিডিও)
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=e-EYAO33X6k&t=9s[/embed] ডেড সি বা মৃত সাগর মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল এবং জর্ডানের সীমান্তে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত লবণাক্ত হ্রদ। জর্ডান নদীর বদ্বীপ হিসেবে...
বেহুলার বাসরঘর কোথায় পাবেন?
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=COhw21Wue8w[/embed] বেহুলার বাসরঘর। বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে আর মহাস্থানগড়ের কাছে গোকুল, রামশহর ও পলাশবাড়ি গ্রামের সংযোগস্থলেই রয়েছে- রহস্যময়...
(ভিডিও) দুধপাথরের অলৌকিক বিশ্বাস | মানত করলেই মুক্তি | খোদার পাথর ভিটা | পুণ্ড্রনগর (মহাস্থানগড়)
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=xmQtig7mtjc[/embed] পুণ্ড্রনগরখ্যাত আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু প্রাচীন নিদর্শন। তেমনি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো খোদার...
আর্টপিক্সের কর্মশালায় শিল্পীদের তুলিতে জলরঙ
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তরুণ প্রজন্ম যখন স্মার্টফোন আর ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকেছে ঠিক তখন নিজ সাংস্কৃতিকে ধারণ করতে আর্টপিক্স...