ডেড সি বা মৃত সাগর মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল এবং জর্ডানের সীমান্তে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত লবণাক্ত হ্রদ। জর্ডান নদীর বদ্বীপ হিসেবে পরিচিত এই হ্রদের পূর্ব তীর জর্ডানের এবং পশ্চিম তীর ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের অন্তর্গত।
ইংরেজি নাম ডেড সি। বাংলায় মৃত সাগর। যেখানে পানিতে নেমে সবাই ভেসে থাকেন। সাঁতার না জানলেই এই সাগরের পানিতে ভেসে থাকা যায়। জর্ডান নদীর এই শাখা হ্রদটিকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। সমুদ্রের উচ্চ লবণাক্ততার কারণে এতে জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। সেই কারণেই একে মৃত সাগর বা ডেড সি বলা হয়। অবশ্য উদ্ভিদ বা প্রাণী না থাকলেও এখানে মাইক্রোবিয়াল ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া রয়েছে।
এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত পানির প্রাকৃতিক আধার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২০ মিটার গভীরে অবস্থিত এই স্থান বিশ্বের নিম্নতম স্থলভূমি। এর লবণাক্ততা শতকরা ৩৪ ভাগ। সমুদ্রের পানির চেয়ে এর লবণাক্ততা ৮.৬ গুণ বেশি।
মৃত সাগরের উৎপত্তি হয় প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে। প্রায় তিরিশ লক্ষ বছর আগে বর্তমান জর্ডান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগরের পানি বারবার প্লাবিত হত। এর ফলে একটি সংকীর্ণ উপসাগরের সৃষ্টি হয়। উপসাগরটি জেজরিল উপত্যকায় একটি সংকীর্ণ সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। প্রাকৃতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, কালক্রমে পূর্ব উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগরটি পরিবেষ্টিত হয়ে হ্রদে পরিণত হয়।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে , মহাসাগরের পানি এবং মৃত সাগরের পানি মিশে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর মধ্যে পার্থক্য আছে । মৃত সাগরের পানিতে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড , ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড , ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এর লবণাক্ততা শতকরা ৩০% । ফলে পানির ঘনত্ব ১.২৪ কিলোগ্রাম / লিটার। উচ্চ প্লবতার কারণে যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে।
মৃত সাগর অঞ্চলটি চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষণাস্থল হয়ে উঠেছে। অনেকের বিশ্বাস, মৃত সাগরের কাদা বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে সহায়ক। এর মূলে রয়েছে হ্রদের পানিতে খনিজ দ্রব্যাদির বিপুল উপস্থিতি এবং বাতাসে অ্যালার্জি উৎপাদক পদার্থ, পরাগরেণু, উচ্চ ভূ-মণ্ডলীয় চাপ, সৌর বিকিরণে অতি বেগুনি উপাদানের কম উপস্থিতি। উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। এই অঞ্চলে অতি বেগুনি রশ্মির স্বল্পতা সান বাথ নেওয়ার পক্ষে উপযুক্ত। সোরিয়াসিস চর্মরোগের জন্য দীর্ঘসময় সানবাথ বেশ উপকারী।
অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে এই হ্রদে কোন উদ্ভিদ বা প্রাণী বাঁচে না বলেই একে মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায় এখানে। যদিও সংলগ্ন এলাকায় বন্যপ্রাণী বা উদ্ভিদ দেখা যথারীতি মেলে।
মৃত সাগর নামটিকে যতই অশুভ বলে মনে হোক না কেন, পর্যটকদের কাছে এই আকর্ষণ কিন্তু নেহাত কম নয়। বরং গন্তব্য হিসেবে এটি তাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানকার পানিতে ভেসে থাকতে অনেক অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীই দারুণ ভালোবাসেন। এই পানিতে গোসল করলে রোগমুক্তি হবে বলেও অনেকে বিশ্বাস করেন। যদিও অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি শরীরে পক্ষে ক্ষতিকারকও হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণে লবণ কিডনি এবং হার্টের ক্ষতি করতে পারে। যার ফলে মৃত্যুও ঘটে।
আরও খবর
১৮০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের বিস্ময় ‘ভরত রাজার দেউল’
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=ihmsi3Kt8P0[/embed] ব্যস্ত নগরজীবনে কাজকর্মের চাপে যখন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই কোনো দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন। একঘেয়েমি দূর হওয়ার...
বেহুলার বাসরঘর কোথায় পাবেন?
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=COhw21Wue8w[/embed] বেহুলার বাসরঘর। বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে আর মহাস্থানগড়ের কাছে গোকুল, রামশহর ও পলাশবাড়ি গ্রামের সংযোগস্থলেই রয়েছে- রহস্যময়...
(ভিডিও) দুধপাথরের অলৌকিক বিশ্বাস | মানত করলেই মুক্তি | খোদার পাথর ভিটা | পুণ্ড্রনগর (মহাস্থানগড়)
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=xmQtig7mtjc[/embed] পুণ্ড্রনগরখ্যাত আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু প্রাচীন নিদর্শন। তেমনি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো খোদার...
আড়াই হাজার বছরের পুরোনো নগরজীবনের জীবন্ত ইতিহাস মহাস্থানগড় (ভিডিও)
মহাস্থানগড়। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো এক নগরজীবনের...
আর্টপিক্সের কর্মশালায় শিল্পীদের তুলিতে জলরঙ
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তরুণ প্রজন্ম যখন স্মার্টফোন আর ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকেছে ঠিক তখন নিজ সাংস্কৃতিকে ধারণ করতে আর্টপিক্স...