বেহুলার বাসরঘর। বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে আর মহাস্থানগড়ের কাছে গোকুল, রামশহর ও পলাশবাড়ি গ্রামের সংযোগস্থলেই রয়েছে- রহস্যময় ও বিস্ময়কর ‘তিন কোণ’ বিশিষ্ট স্থাপত্য নিদর্শন ‘বেহুলার বাসরঘর’। স্থাপত্যটি গোকুল মেধ বা লক্ষীন্দরের মেধ বলেও পরিচিত। স্থানীয়রা এই নিদর্শনকে বেহুলার বাসরঘর বলে থাকলেও ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এটি একটি প্রচীন বৌদ্ধ মঠ। প্রাচীন বাংলার সুবিখ্যাত মঙ্গলকাব্য মনসামঙ্গলের প্রধান চরিত্র এবং চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দরের স্ত্রী বেহুলা। অনেকেই বলে থাকেন, এখানেই হয়েছিলো বেহুলার বাসর। যা সেনযুগেরও অনেক আগে। তবে বর্তমানে গবেষকদের মতে, এটি ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৌদ্ধমঠ। বেহুলা-লখিন্দরকে নিয়ে যে কিংবদন্তির গল্পগাথা রয়েছে- সেই বেহুলা ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের মেয়ে। ওখানকার ঐতিহাসিক এক জমিদার বাড়ির দুলালী কন্যা ছিলেন অনিন্দ্য রূপে -গুণের অধিকারিণী বিশ্বনন্দিত বেহুলা। ষোড়শ শতাব্দীর প্রাচীন লোককাহিনীর সতী-সাবিত্রী কিংবদন্তির নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর বাবার নাম বাছোবানিয়া ওরফে সায় সওদাগর। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আছে বেহুলার পৈতৃক ভিটায় জীয়নকূপ। আর বগুড়ার গোকূলে যুগের পর যুগ পাড়ি দিয়ে টিকে আছে তার বাসরঘর। বেহুলার বাসরঘর বা এই বৌদ্ধমঠটি মূলত একটি উঁচু ইটের স্তূপ। এর উচ্চতা প্রায় ১৩ মিটার বা ৪৫ ফিট। ১৯৩৪-৩৬ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে বিভিন্ন মাপের ১৭২টি কুঠুরি আবিষ্কৃত হয়। কক্ষগুলো দেখতে তিন কোণের মতো। স্তূপটির পশ্চিম অংশে আছে বাসরঘরের প্রবাদ স্মৃতিচিহ্ন। পূর্বে ২৪ কোণ বিশিষ্ট চৌবাচ্চাসদৃশ একটি স্নানাগার। স্নানাগারের মধ্যে আবার ৮ ফুট গভীর কূপ। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানীকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। প্রত্নতাত্ত্বিকরা কী বলছেন? তাদের মতে, এটি বৌদ্ধ স্তূপের সঙ্গে মিলে যায়। ষষ্ঠ ও সপ্তদশ শতাব্দীর বৌদ্ধ স্থাপনার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। কেবল গঠন না, প্রত্নতাত্ত্বিকরা গুরুত্ব দিয়েছেন সেখানে পাওয়া নানা টেরাকোটার প্রতিও। ননীগোপাল মজুমদারের অধীনে হওয়া এ খননকার্যে বেশকিছু টেরাকোটা পাওয়া যায়। টেরাকোটাগুলো ছিল গুপ্ত যুগের। গুপ্ত যুগের সময় হচ্ছে- ৩২০ থেকে ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ। এর মধ্যে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময় পুরো ভারতবর্ষই প্রায় তাদের অধীনে চলে আসে। একে অনেকে ভারতের স্বর্ণযুগও বলে থাকেন। গোকুল মেধে পাওয়া টেরাকোটাগুলো গুপ্ত যুগের শেষ পর্যায়ের। সে কারণে সহজেই ধরে নেওয়া যায় গোকুল মেধ ষষ্ঠ শতাব্দীতে তৈরি। তাহলে মৌর্য আমলে বা অশোকের সময়ে এটি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই স্থানটি পরিদর্শন করে থাকেন। এটির সাথে যে মিথ বা কিংবদন্তী জড়িয়ে আছে যে বেহুলার বাসরগর, সেটিও পর্যটকদেরকে ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করে। সবকিছু ছাপিয়ে প্রচীনকাল থেকেই লোকমুখে পরিচিত লোককথার সেই মনাসামঙ্গল কাব্যের বেহুলার বাসর হিসেবেই। বগুড়ার মহাস্থানগড় দেখে ফিরবার পথেই বেহুলার বাসর ঘর দেখে ফিরতে পারবেন।
আরও খবর
১৮০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের বিস্ময় ‘ভরত রাজার দেউল’
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=ihmsi3Kt8P0[/embed] ব্যস্ত নগরজীবনে কাজকর্মের চাপে যখন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই কোনো দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন। একঘেয়েমি দূর হওয়ার...
যে সাগরে মানুষ ডোবেনা | ঘুরে আসুন ডেড সি বা মৃত সাগর (ভিডিও)
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=e-EYAO33X6k&t=9s[/embed] ডেড সি বা মৃত সাগর মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল এবং জর্ডানের সীমান্তে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত লবণাক্ত হ্রদ। জর্ডান নদীর বদ্বীপ হিসেবে...
(ভিডিও) দুধপাথরের অলৌকিক বিশ্বাস | মানত করলেই মুক্তি | খোদার পাথর ভিটা | পুণ্ড্রনগর (মহাস্থানগড়)
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=xmQtig7mtjc[/embed] পুণ্ড্রনগরখ্যাত আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু প্রাচীন নিদর্শন। তেমনি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো খোদার...
আড়াই হাজার বছরের পুরোনো নগরজীবনের জীবন্ত ইতিহাস মহাস্থানগড় (ভিডিও)
মহাস্থানগড়। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো এক নগরজীবনের...
আর্টপিক্সের কর্মশালায় শিল্পীদের তুলিতে জলরঙ
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তরুণ প্রজন্ম যখন স্মার্টফোন আর ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকেছে ঠিক তখন নিজ সাংস্কৃতিকে ধারণ করতে আর্টপিক্স...