সাজেক ভ্যালীর গাইডলাইন (ভিডিও)

Spread the love

সাজেক, যেখানে মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায়, কিংবা বলতে পারেন পাহাড়ের গায়ে মোড়ানো মেঘের চাদর। সাজেক আসলে মেঘ পাহাড়ের রাজ্য। এক সময় মেঘ দেখতে মানুষ দার্জিলিং যেত, শিলং যেত। এখন এই চির সবুজের বাংলাদেশেই এমন জায়গা আছে যেখানে পাহাড়ের চুড়াঁয় দাড়িয়ে মেঘের সমুদ্রে অবগাহন করতে পারেন।

কখন যাবেনঃ
সাজেক এর এক এক সময়ের রুপ এক এক রকম। তবে সাজেকের পূর্ন রুপ দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সেপ্টেম্বর এর শেষ থেকে নভেম্বর এর মাঝামাঝি সময়ে যেতে হবে।

কিভাবে যাবেনঃ
আঁকা বাঁকা পাহাড়ী পথ বেয়ে চাঁদের গাড়িতে করে সাজেক যাওয়া সত্যিই অসাধারন। যাওয়ার পথে গাড়ি কখনো আকাশের দিকে উঠতে থাকে আবার কখনো নিচে নামতে থাকে। মাঝে মাঝে পাহাড়ের বাঁকে সামনের পথ দেখা যায় না। মনে হয় এই বুঝি গাড়ি পাহাড়ের খাঁদে পরে যাচ্ছে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার এই জার্নিটা ঠিক রোলার কোস্টার রাইডের মত এডভেঞ্চারে ভরপূর।
সাজেক যেতে হলে আপনাকে প্রথমে বাসে করে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। তারপর খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা মোড় থেকে চান্দের গাড়ী রিজার্ভ করে সাজেক যাওয়া যাবে। একটি চান্দের গাড়ীতে অনায়াসে ১২ জন যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে শ্যামলী , হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা যায় । এছাড়া BRTC ও সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় ।
যোগাযোগঃ সেন্টমার্টিন্স পরিবহন – আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ ।
শ্যামলী পরিবহন – আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫ । আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া (চট্টগ্রাম)ঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯ ।
শান্তি পরিবহন- আরামবাগ ( ঢাকা ) – ০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ । চট্টগ্রাম থেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন ।
BRTC এসি বাস কদমতলী চট্টগ্রাম ০১৫৫৭৪০২৫০৭০, খাগড়াছড়িঃ ০১৬৮২৩৮৫১২৫০।
চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার রুবেলঃ ০১৮২০২২৯৫২৮
বি দ্রঃ রুবেল খুবই ভাল ছেলে, তাকে বললে সে আপনার জন্য সাজেকে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলতে পারবে। আমাদের জন্য করে দিয়েছিল।

আপডেট:
এখন সাজেক যেতে হলে আর্মি এসকর্টের সাথে যেতে হয়। এসকর্ট যায় দীঘিনালার আরো প্রায় ১৫ কিলোমিটার সামনে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প থেকে। সকাল সাড়ে ১০টা ও বিকেল ৩টায় এসকর্ট যায়। সাজেক থেকেও একই সময়ে এসকর্ট ছেড়ে আসে।

কোথায় থাকবেনঃ
সাজেকে রাতে থাকতে হলে ঢাকা থেকে থাকার জায়গা বুকিং দিয়ে যেতে হবে নতুবা থাকার জন্য ভাল যায়গা নাও পেতে পারেন। অন্তত মাস খানেক আগে বুকিং দিলে ভাল রুম পেতে পারেন। সাজেকে থাকার জন্য সেনাবাহিনীর দুইটা রিসোর্ট আছে। তাছাড়া সেখানে এখন অনেকগুলো লোকাল কটেজ ভাড়া নেওয়া যায়।
রুনময় রিসোর্ট

থাকার জন্য যেসব রিসোর্ট বা জায়গা আছে তা হলোঃ
সাজেক রিসোর্ট

সাজেক রিসোর্টঃ যোগাযোগ ০১৭৮৩৯৬৯২০০। মোট ৪ টি রুম আছে। আর্মি অফিসারদের জন্য ভাড়া ২৫০০-৫০০০, সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ভাড়া ৪০০০-৭০০০, সাধারন জনগনের জন্য ভাড়া ১০০০০-১৫০০০ টাকা প্রতি রাতের জন্য।
রুনময় রিসোর্টঃ যোগাযোগ ০১৮৬৫৬৮৮৭৭। মোট ৫ টি রুম আছে। আর্মি অফিসারদের জন্য ভাড়া ১২৫০-১৬৫০, সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ভাড়া ২৫৫০-৩১৫০, সাধারন জনগনের জন্য ভাড়া ৪৪৫০-৪৯৫০ টাকা প্রতি রাতের জন্য।

রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউসঃ যোগাযোগ ০১৮৩৮৪৯৭৬১২, ০১৮৬০১০৩৪০২। ১৫ জন থাকতে পারবেন। ভাড়া ১০০ টাকা জনপ্রতি (কম-বেশী হতে পারে)।
আলো রিসোর্টঃ যোগাযোগ ০১৮৬৩৬০৬৯০৬। মোট ৬ টি রুম। ভাড়া ৭০০-১০০০ টাকা প্রতি রাতের জন্য।
লুসাই কটেজঃ যোগাযোগ ০১৮৭৯৩০০৫০২।
মেঘ মাচাংঃ সাজেকের বেস্ট রিসোর্টের স্বীকৃতি প্রাপ্ত। চমৎকার ভিউ পাবেন এখানে। যোগাযোগ ০১৮২২ ১৬৮৮৭৭ রুম প্রতি ২৫০০ টাকা ভাড়া । এক রুমে চারজন থাকতে পারবেন ।
মেঘ পুন্জিঃ সাজেকের আরও একটি বেস্ট রিসোর্ট। যোগাযোগ নাম্বার 01815-761065 (Sajek), 01911-722007 (Dhaka) ওয়েব সাইটঃ http://www.meghpunji.com/
জুমঘরঃ আরও একটি ভালো রিসোর্ট 01884208060 এই নাম্বারে ফোন দিয়ে বুকিং দিতে পারেন।
রক প্যারাডাইসঃ সাজেকের কংলাক পাড়াতে অবস্থিত এ কটেজটি আপনাকে বেস্ট ভিউ দিবে বুকিং করতে ফোন করতে পারেন ০১৮৪২৩৮০২৩৪ নাম্বারে ।
ইমানুয়েল রিসোর্টঃ ডাবল বেডরুম ১৫০০ টাকা। চারজন থাকার মতো রুম ২৫০০ টাকার মধ্যেই পাবেন। আগে বুকিং করে যাওয়া ভালো।
রুইলুই পাড়াতে যে কোন কারবারীর ঘরে জনপ্রতি ১০০ টাকা দিয়ে থাকা যাবে (যদি ফাঁকা থাকে)।

কোথায় খাবেন, কি খাবেনঃ
সাজেকে খাওয়ার জন্য তেমন কোন রেস্টোরেন্ট নেই। যেই রিসোর্ট এ উঠবেন তাদের কে বলে রাখলে তারা খাবার ব্যবস্থা করে রাখে।
খাবার মেনুতে আপনি সকালে ডিম খিচুড়ি (তাতে ডাল এর দেখা পাবেন কিনা সন্দেহ) বা ডিম পরোটা, দুপুরে ও রাতে ভাত, মুরগী আর ডাল ছাড়া আর কিছু তেমন পাবেন না। তবে সেখানকার হেডম্যান এর মেয়ে মারতি দিদির একটা রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে খেতে পারেন, খাবার মান ও স্বাদ ভাল।
রাতে বার বি কিউ পার্টি করতে চাইলে আগে থেকে ব্যবস্থা করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে দিঘিনালা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে সাথে নিয়ে যেতে হবে।
ফেরার সময় খাগড়াছড়ি শহরের সিস্টেম রেস্তোরায় রাতের খাবার খেতে পারেন। খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেস্তোরার অবস্থান । এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন । ব্যাম্বো চিকেন খেতে চাইলে আগে থেকে অর্ডার করে রাখতে হবে। যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬৩৪ , ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩, ০১৭৩২৯০৬৩২২ ।
খাগড়াছড়ি এসে অবশ্যই পাহাড়ি কলা, পেঁপেঁ আর আনাঁরস খেতে ভুলবেন না।

কি কি দেখবেনঃ
সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করা হয় রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়া থেকে। রুইলুই থেকে কংলাক পাড়ায় হেটে যাওয়া যায়, অথবা নিজেদের গাড়ি থাকলে গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়,দূরত্ব দুই কি.মি. প্রায়।
সাজেকের সকালটা একরকম সুন্দর,বিকেলটা আবার অন্যরকম,রাতে চাঁদের আলোয় কিংবা অন্ধকারে যদি সাজেকের সুনসান রাস্তায় হাঁটা না হয় তবে সাজেক ভ্রমনই বৃথা! সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অন্তত এক দুইদিন থাকতেই হবে।সাজেক যাওয়ার ভালো সময় বর্ষা এবং শীত।বর্ষার টুপটাপ বৃষ্টি, হাতের কাছে নেমে আসা মেঘ আর চারদিকের সবুজ মিলিয়ে সাজেক যেন পাহাড়ের রানী হয়ে উঠে।শীতের কুয়াশা ঢাকা সাজেক আবার আলাদা রকম সুন্দর।

সাজেক যাওয়া কিংবা আসার পথে আপনি দেখতে পারেন হাজাছড়া ঝরনা। দিঘিনালা থেকে মাত্র ৮ কিঃমিঃ দুরে এই ঝরনাটি অবস্থিত।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে বাঘাইহাট বাজারের পরই দেখা মিলবে পাহাড়ী দুই নদীর মিলনস্থল ‘গঙ্গারাম মুখ’। জায়গাটা দেখতে অনেকটা ইংরেজি Y এর মত।

সঙ্গে কি নিবেনঃ

ব্যাগ
গামছা
ছাতা
Odomos cream
টুথপেষ্ট+ সাবান+শ্যম্পু
কেডস/ সেন্ডেল
ক্যামেরা+ব্যাটারী+চার্জার
পলিথিন
সানক্যাপ
সানগ্লাস
সানব্লক
টিস্যু
ব্যক্তিগত ঔষধ
লোশন
ভ্যাসলিন
রবি অথবা এয়ারটেল সিম। অন্য কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক তেমন একটা পাওয়া যায় না

ট্যুর প্লানঃ
দিন-০ঃ রাতের বাসে করে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি।
দিন-১ঃ সকাল বেলা খাগড়াছড়ি নেমে নাস্তা করে জিপ এ করে সাজেক।
দিন-১ঃ দুপুরে সাজেক পৌছে যাবেন, বিকেলে কংলাক পাড়া থেকে সূর্যাস্থ দেখে আসবেন।
দিন-২ঃ পরের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সূর্যোদয় দেখবেন। তারপর সকাল বেলা নাস্তা করে জিপ এ করে সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি চলে আসবেন, পথে হাজাছড়া ঝরনা দেখে আসবেন।
দিন-২ঃ রাতের বাসে খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা ফিরে আসবেন।

খরচ:
বাসের টিকেটঃ নন এসি ৫২০/= টাকা, এসি ১০০০/=টাকা।
রিসোর্ট/ কটেজঃ ১০০০/=টাকা থেকে ১৫০০০/= টাকা।
খাবারঃ প্রতিবেলা ১০০/= টাকা থেকে ৩০০/=টাকা।
চান্দের গাড়িঃ যাওয়া আসা ৮৫০০/= টাকা থেকে ১০০০০/= টাকা।

খেয়াল রাখবেনঃ
মানুষ প্রকৃতির কাছে যাবে, তবে প্রকৃতি যাতে তার মতো করে সুন্দর থাকে সেই দায়িত্বটাও মানুষের হাতে। আপনার ব্যবহার কোন প্রকার পলিথিন, পানির বোতল, প্যাকেট, ময়লা ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। না হলে সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন।